আজ আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদের ৬৮তম মৃত্যু বার্ষিকী
শাহেদ খানঃ
১৯৫৩ সালের ৩০ই সেপ্টেম্বর মৃত্যু বরণ করেন সাহিত্যিক আবদুল করিম। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ ভারত ও পূর্ব পাকিস্তানের একজন বাঙালি সাহিত্যিক। প্রাচীন পুথি সংগ্রাহক ও পুথি সাহিত্যের ঐতিহ্য অন্বেষণকারী এক ব্যক্তিত্ব।
আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ ১৮৭১ সালে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার অন্তর্গত সুচক্রদন্ডী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৮৯৩ সালে পটিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পেশা হিসেবে তিনি চট্টগ্রামে মিউনিসিপ্যাল স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। তারপর ৩ বছর চুক্তিতে সীতাকুণ্ড মধ্য ইংরেজি স্কুলে শিক্ষকতা করে পরে কিছুদিন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের দপ্তরে কাজ শুরু করেন। এরপর আনোয়ারায় একটি স্কুলে ৭ বছর প্রধান শিক্ষক হিসেবে ছিলেন। সবশেষ আনোয়ারার এই স্কুল থেকেই ডিভিশনাল ইনসপেক্টর অব স্কুলস্ এর অফিসে কেরানীর চাকরী নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে চলে আসেন।
আবদুল করিম আমৃত্যু পুথি সংগ্রহ করেছেন। তাঁর সংগৃহীত ৬৯৫টি পুথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত রয়েছে এবং ৩৮১ টি পুথি রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের সংরক্ষিত রয়েছে। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে ১৯২০-২১ সালে দুই খণ্ডে তাঁর লেখা বাংলা পুথির তালিকা বাঙালা প্রাচীন পুথির বিবরণ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে রক্ষিত পুথির তালিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে পুথি পরিচিতি শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি ১১টি প্রাচীন বাংলা গ্রন্থ সম্পাদনা ও প্রকাশ করেছেন। তাঁর লেখা বইয়ে ইসলামাবাদে পূর্বে অজ্ঞাত ছিলেন এমন প্রায় ১০০ জন মুসলিম কবিকে তিনি পরিচিত করান। তাঁর উল্লেখযোগ্য সম্পাদিত পুঁথিসমূহের মধ্যে আলাওলের "পদ্মাবতী", জ্ঞানসাগর, গোরক্ষ বিজয়, মৃগলব্ধ, সারদা মুকুল ইত্যাদি অন্যতম।
ড. এনামুল হক বলেন, ‘পদ্মাবতীর প্রাচীন পান্ডুলিপির আবিস্কার আবদুল করিমের জীবনের প্রথম ও স্মরণীয় ঘটনা। এটি জাতীর পক্ষেও এক মূল্যবান আবিস্কার। এই আবিস্কারকে ভিত্তি করে আজ জাতির প্রাচীন সাহিত্য সাধনার সৌধ গড়ে উঠেছে।’
আবদুল করিম সাহিত্যে অনন্য অবদানের জন্য নদীয়া সাহিত্য সভা তাঁকে "সাহিত্যসাগর" খেতাব এবং চট্টল ধর্মমণ্ডলী তাঁকে "সাহিত্যবিশারদ" খেতাব প্রদান করে।
আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক ধ্যান–নিমগ্ন যোগী, বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ ডিগ্রীধারী না হলেও তিনি নিজের সাধনায় প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের বিস্মৃত বা উপেক্ষিত এমন রত্নভান্ডার উদ্ধার করেন এবং জনসমক্ষে প্রচার করেন যে তিনি উপরোক্ত সম্মান অর্জনের উপযুক্ত বিবেচিত হন।