বুদ্ধ পূর্ণিমা ও এর তাৎপর্য
আজ সমগ্র বৌদ্ধ বিশ্বের জন্য এক অতি পবিত্র আর গুরুত্বপূর্ণ দিন। দিনটিকে বাংলা পঞ্জিকায় বৈশাখী পূর্ণিমা বলা হলেও বৌদ্ধরা বুদ্ধ পূর্ণিমা নামে জানে। জাতিসংঘ আজকের দিনটিকে "ইন্টারন্যাশনাল ভেসাক ডে" হিসেবে পালন করে।
কেন বুদ্ধ পূর্ণিমা বলা হয়?
৬২৫ খ্রিষ্ট পূর্বের আজকের এ দিনে রাজা শুদ্ধোদন ও রাণী মহামায়ার সংসারে নেপালের লুম্বিনি কাননে জন্ম হয় জগৎ সূর্য রাজকুমার সিদ্ধার্থের। জন্মের সাথে সাথে সাত পা হেটে গিয়ে সপ্তম পদে বলেন,"আমি অগ্র, আমি শ্রেষ্ঠ "
৫৯০ খ্রিস্ট পূর্বে ঠিক আজকের দিনে ভারতের গয়ার অশ্বথ বৃক্ষের আসনে বসে রাজকুমার সিদ্ধার্থ বুদ্ধত্ব জ্ঞান প্রাপ্ত হন বলে রাজকুমার সিদ্ধার্থের নাম হয় বুদ্ধ। যার অর্থ ‘মহাজ্ঞানী’। এমন দিনে মহাজ্ঞানীর আবির্ভাব হয় বলে দিনটার নাম হয় বুদ্ধ পূর্ণিমা। জ্ঞান প্রাপ্ত হওয়ার স্থানের নাম হয় বুদ্ধগয়া এবং যে অশ্বথ বৃক্ষের নিচে বসে বুদ্ধ জ্ঞান প্রাপ্ত হন সে বৃক্ষের নাম হয় বোধিবৃক্ষ।
৫৪৫ খ্রিষ্ট পূর্বে আজকের এ দিনে ভারতের কুশিনারায় অন্তিম শয্যায় শায়িত হয়ে মহা পরিনির্বাণ প্রাপ্ত হন দেব মনুষ্য পূজিত মহামানবের।
কেন বুদ্ধ বা মহাজ্ঞানী বলা হয়?
জগতে তিনি একমাত্র ধর্ম প্রচারক যিনি একমাত্র সর্বজীবের প্রতি মৈত্রীপোষণ করতেন এবং তাঁর মহা মৈত্রী বাণী
"জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক।"
যারা ওনার ধর্ম চর্চা বা পালন করবেন শুধু তারা নয়, যাদের ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ যাদের প্রাণ আছে তারাই ওনার আশির্বাদ প্রাপ্ত হন।
তিনি একমাত্র ধর্ম প্রচারক যিনি বিনা রক্তপাতে ধর্মপ্রচার করেছেন। যিনি কাউকে স্বর্গ নরকের ভয় বা লোভ দেখিয়ে ওনার ধর্মে আহব্বান করেননি যিনি বলেছিলেন, "এসো, দেখো,ব্যাখ্যা করো, যদি ভালো লাগে গ্রহণ করো"
তিনি ছিলেন কর্মে বিশ্বাসী। তিনি অন্য কেউ জগত বা জীবকে পরিচালিত করেন এটা বিশ্বাস করতেন না। বুদ্ধ বিশ্বাস করতেন কর্মই আমাদের পরিচালিত করেন এবং তিনি আবিস্কার করেন "চারি আর্য সত্য, আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ এবং পঞ্চশীল "। যা সঠিক অনুশীলন ও পালনের মাধ্যমে যে কেউ নির্বাণ মার্গ পেতে পারেন।
যারা এহেন নৈর্বাণিক ধর্ম চর্চা ও প্রতিপালন করেন তাদের বলা হয় "বৌদ্ধ"
জন্মগত ভাবে বৌদ্ধ পরিবারে জন্ম নিলে প্রকৃত বৌদ্ধ হয়না যারা বুদ্ধের দেশিত বাণী এবং নীতি পালন করেন, সর্বজীবে দয়া পোষণ করেন তারাই প্রকৃত বৌদ্ধ।
সর্বোপরি একই ক্ষণে মহাজ্ঞানীর জন্ম, বুদ্ধত্বলাভ এবং মহা পরিনির্বাণ ইহাই ইংগিত হয় জগতে সবকিছু সৃষ্টি আর পূর্ণতা যেমন আছে তেমন ধ্বংস বা সমাপ্তি আছে,সবকিছু অনিত্য।
লোভ, দ্বেষ, মোহ বা তৃষ্ণার কারণে বিশ্বে আজ এতো শত্রুতা আর হানাহানি।
"অহিংসা আর হানাহানি বিদূরিত হোক, বিশ্ব করোনার মহামারী থেকে মুক্ত হোক, জগতের সকল প্রাণী প্রজ্ঞাবান হোক।"
লেখকঃ সঞ্জয় বড়ুয়া, এম বি এ।